Featured Post

কবিতাঃকলিযুগের সমাজ ,কবি -জাহানুর হোসেন ,New Bengali Poem- Koli Juger Somaj . Poet- Jahanur Hushen

 কলিযুগের সমাজ         জাহানুর হোসেন সমাজ হইলো সভ্যতার কারিগড় , সাধারন মাটি দিয়া তৈরি হয় ঘড়। এ কেমন কলিযুগ? যেখানে জনক জননী অপুজ্য, আর মেয়েদের নাকি অসর্য । এ কেমন কলিযুগ? যেখানে মাতাকে ঘৃণা আর পিতাকে অসম্মান, যেখানে মেয়ে কে জন্ম দিলে নাকি সমাজের কাছে  অপমান। এ কেমন কলিযুগ? যেখানে না পাওয়া যায় সম্মান, না পাওয়া যায় ভালোবাসা । যেখানে মেয়েদের মন খুলে শ্বাস নয় অন্ধকারে রাখে  আশা। এ কেমন কলিযুগ? যেখানে মেয়েদের সম্মান নয়, করা হয় অপমান । যেখানে মেয়েদের স্বপ্ন ভাবেনা, না বুঝে কন্যাদান। এ কেমন কলিযুগ? যেখানে শিক্ষার ধারায় কিছু নয়, টাকা দিয়া সব চেনা, যেখানে জন্মদাত্রী মায়ের তুলনার  মেয়ে কে হয় বেচা _কেনা। সমাজ তো বদলাবেনা আমাদের ভাবনা বদলাতে লাগবে, তবেই তো মায়ের মতন সম্মান জনক মেয়েরাও জাগবে।।

গল্পঃ-খোলস, লেখকঃ-সৌমেন সরকার। New bengali story Kholosh, Write:- Soumen Sarkar

                  খোলস

                                          সৌমেন সরকার

                                         


শ্রীচরণেষু বাবা,

               জানি তুমি আমার ওপর যৎপরোনাস্তি ক্রুদ্ধ হয়ে আছ।তা হবারই কথা;তার জন্য আমি তোমাকে দোষারোপ করছি না।বরং নিজেকে আসীম ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে।কারণ,রাগ তো তার ওপরই দেখানো যায় যাকে সবথেকে বেশী ভালোবাসা হয়।

আমি নিশ্চয়ই দোষী।আমার পাপ ক্ষমার অযোগ্য!আমি...থাক সে কথা...

               কোলকাতারর বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের মেয়ে হয়ে এইভাবে তোমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে পালিয়ে আসব,তা স্বপ্নেওও ভাবতে পারনি।

জানত বাবা,জীবনে মানুষ এমনকিছু ভুল করে বসে যার মাশুল তাকে আমৃত্যু গুনতে হয়;তাও চড়া সুদের সাথে!

              তোমার মনে আছে বাবা,ক্যালকাটা মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউট থেকে আমি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পুরো কোলকাতারর মধ্যে প্রথম হয়েছিলাম বলে তুমি আমাকে একটা স্কুটি উপহার দিয়েছিলে!আর বর্ধমানে তোমার এগ্রিকালচার অফিস থেকে আমাকে একটা ল্যাপটপও উপহার দিয়েছিল।বর্ধমানের এগ্রিকালচার অফিসারের মেয়ে পুরো কোলকাতায় প্রথম হয়েছে বলে কথা!কত সম্মান দিয়েছিল আমায়;কত সম্মান পেয়েছিলে তুমি।কিন্তু সেই আমিই...

আসলে ওই দুই পদার্থই আমাকে অসভ্যতার চরম নেশাখোর বানিয়ে দিয়েছিল।কেন দিয়েছিলে ওগুলো বাবা?না দিলেই বোদহয় ভালো হত...

তুমি মাথায় হাত রেখে উদাত্তকণ্ঠে বলেছিলে-

 

"সত্যিই,তুই ঠিক বলেছিলি মা;আমিই ভুল।একটা মেয়ে ইচ্ছাশক্তি দ্বারা ডজন ডজন ছেলেকে প্রতিমুহূর্তে ধরাশায়ী করতে পারে। I'm proud of you my little princes...I'm proud of you dear."

 

কিন্তু আজ আমারই জন্য তোমার লজ্জার সীমা নেই।তবে চিন্তা কোরোনা,অতি শীঘ্রই এই যন্ত্রণা থেকে তোমাদের নিষ্কৃতি দিয়ে দেব...এই চিঠি তোমার হাতে পৌঁছানোর পূর্বেই হয়ত...

আসল ঘটনাটা বলি তোমায়।

                   সবকিছুর মূলে আছে ওই মরণ বুক আর মরণ বাইক...আমি ফেসবুক আর স্কুটির কথা বলছি।যখন সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখন ফেসবুকে আলাপ হয় অভির সাথে।পুরো নাম অভিজিৎ সাঁতরা।ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক গাঢ় হয়ে আসে নিমেষের মধ্যে।জানতে পারি ওর বাড়ী বর্ধমানে...তবে তোমার অফিস থেকে অনেক দূরে...অন্য এলাকায়।ও নিউটাউনে একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানীর ফিল্ড অফিসার হয়ে এসেছে।

ভুলটা তখনই করে বসি!

আমার যাবতীয় তথ্যাদি জানিয়ে দিই ওকে।এতটাই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিল।বললাম,প্রায় দশ কোটি টাকার উত্তারাধিকারিণী আমি।ও কিন্তু কোন ঔৎসুক্য ভাব দেখালো নাম।মুখটা পুরো ভাবলেশহীন।নির্বিকারভাবে আমায় বলল যে,ও বর্ধমানের এক প্রাচীন রাজপরিবারের একমাত্র বংশধর।তখনও যদি তোমার সব খুলে বলতাম...সন্তরট্টন বংশ পদবী এখন সাঁতরা হয়ে গেছে।এটা অবশ্য ছিল ওর ঠাকুরদারই অক্ষয় কীর্তি।জানলাম ওর পরিবারে শুধু মা আর ও...এখন অবশ্য মা বর্ধমানে একা থাকে।

আমি বললাম-

 

"আমার বাবা বড়।তাছাড়া দুই কাকা আছে।সকলেই চাকুরীজীবী।মেজো কাকার ছেলে ব্যাঙ্গালোরে প্রফেসারী করে,ছোটকাকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার।থাকে ইতালি।আর আমি।

                      (১)

পরিবারে মেয়ে বলতে আমিই একা।আমি বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পত্তির মালকিন হয়েছি।"

অবশ্য কাকারা থাকে মেদিনীপুরে।আমরা ফোননম্বর এক্সচেঞ্জ করলাম।

শুরু হল অবাধ ফোনকল আর বাঁধাহীন কথোপকথন।তোমরা কখনও আমায় সন্দেহ করোনি।আর আমিও কিছু লুকাতাম না।তাই কথা বললেও তোমরা খেয়াল করোনি।

                তবে মাঝে মাঝে একটু সন্দেহ উঁকি দিত মনের কোণ থেকে।একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানীর F.O হয়ে এমনভাবে সময় নষ্ট করে কি করে।একদিন জিজ্ঞাসা করলাম আমি।ও বলেছিল ওর অ্যাসিসট্যান্স সবকিছু সামলে নিচ্ছে।সে তাদের ব্যাপারে সবকিছুই জানে।

 

-"সব জানে মানে?কি জানে?"

 

ও তখন বলেছিল যে,ও ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলা একদমই পছন্দ করে না।সরাসরি বলল-

 

"আমি প্রথমদিন থেকেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।প্রোফাইল পিকচার দেখেই  তোমাকে প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবেসে ফেলেছি।"

 

ও ফোনেই আমার মতামত চাইল।আমি ওকে আমার সাথে দেখা করতে বললাম।আসলে আমরা কেউ কাউকে এখনও পর্যন্ত দেখিনি।ইস তখনও যদি বুঝতাম...

সে প্রায় বছর চারেক আগের ঘটনা।

             এক ভ্যালেন্টাইন'স ডে তে ও আমার সাথে মেট্রো সিনেমারর সামনে দেখা করতে চাইল,সকাল এগারোটায়।আমি তো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম।কি আর করি,সত্যি কথা বলতে আমিও যে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।আর সে টান এমনই মোহগ্রস্ত করেছিল আমায় যে,তা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার সাধ্য আমার ছিল না।যেমনই হোক,আমিও ভালোবাসি যে ওকে!

               ওর জন্য একটা সোনার ব্রেসলেট কিনলাম।তোমার মনে আছে,সেই সময় বাড়ী থেকে দশ হাজার টাকা চুরি গিয়েছিল।মানে...বুঝতেই পারছ...ওটা আমিই...আসলে আমার প্রথম চুরি ভালোবাসার জন্য!তখনও যদি বুঝতাম কি ভুলই না করতে চলেছি জীবনে!যে ভুলের সংশোধন অসম্ভব।

 

আমি সময়ের কিছু আগেই পৌঁছে গেলাম।অন লাইনে চ্যাটে অবশ্য ওর সাথে কথা চলছিল।তবে সেটা ফোনে।অভি আমায় ফোন করল।ও চলে এসেছে।

কিন্তু একি!কে এ? সামনে আসতেই চমকে উঠলাম।নিজের পরিচয় দিলেও আমার মুখটা হা হয়ে গিয়েছিল।মানে ফেসবুকে যার ছবি দেওয়া এ তো সে নয়!আমার হতভম্ব ভাব দেখে আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ও বলল-

 

"ও আমার বন্ধু জন,খুব সুন্দর দেখতে ওকে।কিন্তু আমায় ভীষণ খারাপ দেখতে।ও ফেস বুক করেনা...তাই ওর ছবি ওর অনুমতি নিয়েই প্রোফাইল পিকচার করেছি।এতে আমার দোষ কোথায় বল?"

 

ওর কথাগুলো আমার বেশ যুক্তিপূর্ণ বলে মনে হল।তবে ও বাকি যা বলল তার সত্যাসত্য নির্ণয় করা তখন আমার পক্ষে নিতান্তই দুরূহ ব্যাপার ছিল।ও এমনই ইমোশনাল লেকচার দিল যে আরও বেশী ভালোবেসে ফেললাম।আমি ওকেই ভালোবাসি,সে ছবিটা অন্য কারো হয় হোক।ও যেমন আমি ওকে তেমনভাবেই ভালোবেসে ফেললাম।

ও অফিসের ফর্মাল ড্রেসে ছিল।আমার সাথে মেট্রো সিনেমাতে একটা সিনেমা দেখে ও অফিসে চলে গেল।

                        (২)

তুমি নিশ্চয় জানো প্রায় বছর তিনেক আমি নিখোঁজ।ওই একবছর চুটিয়ে প্রেম চলল আমাদের।2013 সালের ভ্যালেন্টাইন'স ডে তে ওর হাত ধরে ঘর ছাড়লাম।তোমাকে কিছু জানাইনি।কারণ,বর্ধমানের ঠিকানা জানলে তুমি হয়ত আমাদের...

ও বলেছিল তুমি আমাদের বিয়েতে কোনদিনই মত দেবে না।আর আমিও ওর প্রেমের বন্ধনে এমনই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছিলাম যে ওর প্রস্তাবে না বলতে পারলাম না।তাই সাতপাঁচ না ভেবে ওর হাত ধরে বেরিয়ে পড়লাম অজানা অচেনা খুশীর সন্ধানে।

কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করলাম আমরা।ও বলল যে ওর ফ্ল্যাটে যাওয়া বিবেচনারর কাজ হবে না।দিন দশেকের ছুটি নিয়ে আমাকে সঙ্গে করে চলে এল বর্ধমান।

 

এখানে শুরু হল আমার অপ্রত্যাশিত নববিবাহিত জীবন!

 

শাশুড়িমায়ের কাছ থেকে জানলাম যে অভি আমাকে সবই মিথ্যে কথা বলেছে।ওর বাবা নেই,মা আর ও থাকে।মাকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন-

 

"ওর বাবা মারা গেছেন প্রায় দশ বছর আগে।আমি লোকের বাড়ী কাজ করে আর সেলাই-ফোঁড়াই করে কোন রকমে দুটো পেট চালিয়েছি।অভি কোনমতে মাধ্যমিকটা বার তিনেকের চেষ্টায় টপকিয়েছে।তারপর একটা কুরিয়ার অফিসে কাজ জুটিয়ে নিয়েছে।তবে,মাঝে মাঝেই ও কোলকাতায়য় চলে যায়।বলে,শহরে ঘুরতে ওর নাকি খুব ভালো লাগে।"

 

আমার দুচোখ ছানাবড়া!পায়ের তলা থেকে মাটি পর্যন্ত সরে গেল অনুভব করলাম।মাথায় যেন হাজারটা বাজ ভেঙে পড়ল!টলে পড়লাম,শাশুড়িমা ধরে খাটে বসিয়ে দিলেন।তারপর তাঁকে বললাম সব ঘটনা আনুপূর্বিক সংক্ষিপ্তভাবে।সব শুনে তিনি অত্যন্ত ভেঙে পড়লেন।বললেন-

 

"ঠিক বাবার মত হয়েছে।বাবাকা যোগ্য বেটা বটে!ওর স্বভাবটা বদলাবে না মা আর হয়ত কোনদিন।তুমি চেষ্টা করে দেখ যদি পার।"

-"মানে?আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না মা!"

-"মানে মিথ্যে কথা বলতে আর ঢপ দিতে ওর জুড়ি মেলা ভার!ও এমন ঢপ সবসময়ই দেয়।ওর যা রোজগার তাতে সংসারই চলেনা ঠিক করে..."

 

আমার বুক ফেঁটে কান্না আসছিল জান বাবা।কিন্তু ভাবলাম,এখন আর কি করি।ও তো আমারই স্বামী।তাই যতটা পারি নিজেই চেষ্টা করব।

কিন্তু আমার সকল প্রয়াস বিফলে গেল।মাসকতক পরে বুঝলাম আমার ওপর থেকে ওর ভালোবাসা উবতে শুরু করেছে কর্পূরের মত।বুঝতে দেরি হলনা ও নতুন পাখি তুলেছে টোপে।সবই আমার কপাল।

                একদিন এমন একটা ঘটনা ঘটল যা আমার জীবন ও সংসারে প্রবল এক ঝড় তুলেদিল।ওলোটপালট করে দিল সব অধ্যায়।আমি স্বপ্নেওও কল্পনা করতে পারিনি যে আমার পবিত্র ভালোবাসায় পরিপূর্ণ জীবনের এমন ট্র্যাজিক উপসংহার লিখতে হবে!

                একদিন অভি কাজে বের হবার আগে ওর মোবাইল ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে স্নানে গিয়েছিল।তখন একটা ফোন আসে।আমি ধরলাম।কিন্তু কিছু বলার আগেই যা শুনলাম বিপরীত দিক থেকে তাতে আমার হাত থেকে ফোনটা খাটে পড়ে গেল।দুচোখ বেয়ে জল ঝরতে লাগল বর্ষার ধারার প্রতিটি টুকরোর মত।ও বাইরে আসতেই বললাম-

 

"রিয়া কি তোমার জালে ধরা দেওয়া নতুন পাখি?তোমার নতুন সুইটহার্ট!"

                     (৩)

শুনেই দেখি ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।এতদিন গন্ডগোল হলেও জীবনে এই প্রথম আমাকে এতটা হিংস্রভাবে গালিগালাজ করল আর...

 

-"ছিনাল!তোর বড় রস তাই না?ছ্যাচড়া মেয়েছেলে কোথাকার!আমার ফোন ধরার সাহস তোকে কে দিয়েছে?"

-"না মানে ইয়ে..."

 

আমার কথা আটকে গেল।আমার অজান্তেই তোতলাতে লাগলাম।ও আরো রেগে গেল।সেদিন যে কি হিংস্রপশুর মত বর্বর হয়ে উঠেছিল তা নিজের চোখে না দেখলে হয়ত বিশ্বাসই করতে পারবে না।আমার চুল ধরে গালে সটান ঠাস্ করে এক থাপ্পড় কষিয়ে দিল সজোরে আর সবেগে।সেই আঘাতেই আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাটের এক কোণের ওপর গিয়ে পড়লাম।আমার কপালে গভীর ক্ষত!সেখান দিয়ে দরদর করে রক্ত ঝরতে লাগল।এদিকে চিৎকার শুনে মা এসে আমাকে দেকে ওকে একটা চড় কষিয়ে দিল।ও মাকে চেঁচিয়ে বলতে লাগল-

 

"ওই বেশ্যাটাকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলবে।বেশ আছে,থাকছে,খাচ্ছে।আমার কোন ব্যাপারেই যেন নাক না গলায়।তাহলে জুতো মেরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ী থেকে বার করে দেব এই বলে দিলাম।বলে দাও ওই বোকা...হ্যাঁ,আমি এখন যাব আমার সোনা সুইটহার্ট রিয়ার কাছে।বুঝলি ছিনাল কোথাকার!তোর জন্য জীবনটা কয়লা হয়ে গেল আমার!"

 

আমিতো একটা সুখবর তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি।আমাদের একটা ছেলে হয়েছে,রাজু।এক্কেবারে আমার মত।অভির একছটাকও পায়নি।

তবে আমার জীবন যে এখানেই শেষ তাতে আর সন্দেহ নেই!

               যে ভুল আমি করেছি তা যেন অন্য কারো জীবনে না ঘটে।এই প্রার্থনাই করি ভগবানের কাছে।তবে তোমার কাছে এই চিঠিটা লিখছি অন্য কারণে।আমি মুক্তির পথ বেছে নিয়েছি।কিন্তু আমি চাই আমার মৃত্যুর পর আমার মৃত্যুর জন্য তোমরা কেউই যেন অভিকে দায়ী না করো।কোন পুলিশ কেস করবে না।কারণ,যাকে মন থেকে সতি করে ভালোবেসেছি তাকে ঘৃণাই বা করি কি করে!তাকে ভুলেই বা যাই কি করে!

আমি এমন একজনকে হারালাম যে আমায় কখনও কোনদিন ভালোই বাসেনি।কিন্তু অভি এমন একজনকে হারাল যে ওকে নিজের চেয়েও বেশী ভালোবাসত!তবুও আমি ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

তোমরা ভালো থেকো সবাই।আর পারলে এই অভাগীকে ক্ষমা কোরো।

 

তা:

01:01:2016                                                                                                            ইতি

                                                                                                                                 তোমার নন্দীনি

 

সপ্তাখানেক পর নন্দীনির বাবা অফিসে গেলে টেবিলের ওপর থাকা একটা দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার ওপর চোখ পড়তেই চমকে উঠলেন।তাতে লেখা আছে-

                                              ট্রেনে কেটে মারা গেলেন এক মা ও তার ছেলে

 

বর্ধমান;জানুয়ারি 4,শুক্রবারঃগতকাল রাতে ট্রেনে কেটে মারা গেলেন এক যুবতী গৃহবধূ।বয়স চব্বিশের বেশী নয়।পাশে টুকরােটুকরো হয়ে পড়ে থাকা বছর দেড়েকের এক শিশুপুত্রের মৃতদেহ দেখে অনুমান করা হচ্ছে যে সে ওই মহিলারই সন্তান।কারণ,যুবতীর বাম হাতে থাকা হস্তবন্ধনীর মত একই রকম হস্তবন্ধনী রয়েছে ওই শিশুটির ডান হাতে।উভয় বন্ধনীতে নীলা ও প্রবাল বিদ্যমান।তাছাড়া মহিলার গলায় কালীঠাকুরের লকেটযুক্ত সোনার হার রয়েছে।পরিচয় অজ্ঞাত।পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

                     (৪)

এই দৃশ্যের একটা ছবিও দেওয়া রয়েছে।নন্দীনির বাবা পলাশবাবুর মনে পড়ে গেল তিনিই ওই রক্তমুখী নীলা ও প্রবাল যুক্ত রূপোর হস্তবন্ধনী দুটি নন্দীনিকে দিয়ে বলেছিলেন-

 

"একটা তোর।আর অন্যটা আমার দাদুভাই বা দিদিভাই এর জন্য।আগে থেকে দিয়ে রাখলাম।"

 

আর ওই সোনার হারটা যেখান কালীঠাকুরের লকেট আছে,সেটা তিনি নন্দীনির ষোলবছরের জন্মদিনে তাকে উপহার দিয়েছিলেন।এগুলো সবই উধাও হয়ে গিয়েছিল নন্দীনি নিখোঁজ হবার পর।আদ্যোপান্ত সবকিছুই বুঝতে পারলেন পলাশবাবু।মনে মনে খুবই দুঃখ বোধ করতে লাগলেন।তারপর শূন্যে চোখ তুলে বললেন-

 

"একবার তো আমাকে বলতেই পারতিস মা।তুই তো সবকিছুই আমার সাথে শেয়ার করতিস,আর এটুকু পারলি না।আমি কি তোর কাছে এতটাই পর হয়ে গিয়েছিলাম রে!"

 

তারপর তার কম্পিত হাত থেকে কাগজটা নীচে পড়ে গেল।আর তিনিও চোখ বুজে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন।মাথা দেহের সাথে কিছুটা কৌণিকভাবে বামদিকে হেলে রয়েছে।নিস্তব্ধ!ভীষণ নিস্তব্ধ!শুধু তার দুচোখ বেয়ে দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল দুই দিকে।


Comments

Popular post

কবিতা- বৈষম্য, লেখিকাঃ-শ্রেয়সী মিশ্র। Poem:- Boishomya, Poet:-Shreyasi Mishra

কবিতাঃজালিয়ানওয়ালা বাগ ,কবি কলমেঃ-রীতা বসু । Poem: Jallianwala Bagh, Poet:-Rita Basu, new bengali poem

কবিতাঃ-বীরাঙ্গনা , কবিঃ- ফাল্গুনী মুখার্জী। Poem:- Birangana, Writer:- Falguni Mukharjee